Header Ads

Header ADS

হ্যারি পটার লেখিকার কষ্ট থেকে সফলতা!

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য কার্সড চাইল্ড pdf,  হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন, হ্যারি পটার বাংলা অনুবাদ, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ সিক্রেটস, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অব ফায়ার, হ্যারি পটার সিরিজের সাতটি বই বাংলা অনুবাদ, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস,

হ্যারি পটার লেখিকার কষ্ট থেকে সফলতা-

একজন ডিভোর্স হয়ে যাওয়া সিঙ্গেল মাদার যিনি একসময় তার ছোট্ট মেয়েটির জন্য দু'বেলা দু'মুঠো পেট ভরে খাবার জোগাড় করতে পারতেন না তিনি কিছুদিন পর নিজের কঠোর পরিশ্রম থেকে এতটাই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয় যে, তিনি এখন ইংল্যান্ডের কুইন এলিজাবেথটু এর থেকেও বেশি সম্পদের অধিকারী হয়ে ওঠে!
শুনতে গল্প মনে হলেও এটাই বাস্তব।
কারণ তিনি আর অন্য কেউ নন আমার-আপনার ছোটবেলার ফেভরিট স্টরি হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাওলিং।

আপনি শুনলে হয়তো অবাক হবেন যে, আমাদের সকলের ফেভরেট স্টরি হ্যারি পটার বইটি ১২ জন পাবলিসার দ্বারা রিজেক্টেড হয়েছিল এবং ১৩ নাম্বার যে পাবলিসার ফাইনালি হ্যারি পটার পাবলিশ করেছিলেন তিনিও বলেছিলেন এই সব বই বাজারে চলবে না।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কিভাবে হ্যারি পটার এত মানুষের মন জয় করল এবং কিভাবে জে কে রাওলিং এত বড় সাফল্য অর্জন করলেন সেই কাহিনীটাই আজকে আমি আআপনাদের বলবো। তো চলুন চট করে দেখে নেওয়া যাক।

"যে কোন দিক থেকে ভাবলেই আমার চেনা আমি সব থেকে বড় ব্যর্থ মানুষ ছিলাম" - কথাটি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকা জে কে রাওলিং এর।
হ্যারি পটার সিরিজ আজ প্রায় ৫০ টির বেশি ভাষায় ট্রান্সলেট হয়েছে এবং কয়েক কোটি লক্ষের বেশি বিক্রি হয়েছে এবং প্রায় কুড়ি কোটি ডলার শুধুমাত্র স্পন্সরশিপের জন্য পেয়েছে। ১৯৬৫ সালের ৩১ শে জুলাই ইংল্যান্ডের একটি শহরে জে কে রাওলিং জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি গল্প লিখতে বেশ ভালোবাসতেন এবং বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত গল্প লিখে তিনি তার ছোট্ট বেলার সঙ্গিনী তার বোনকে শোনাতেন।

গল্প লেখার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে ভালোবাসতেন তার আন্টির দেওয়া "জেসিকা মিটফোর্ডের অটোবায়োগ্রাফি অন্সার" তার এত পছন্দ হয় যে তিনি কিছু সময়ের মধ্যেই জেসিকার প্রায় সমস্ত বই পড়ে ফেলেন। এরপর ১৯৮২ সালে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য এপ্লাই করলে রিজেক্টেড হন। এখান থেকে শুরু হয় তার জীবনের রেজেকশনের পালা। ১৯৯০ সালে ম্যানচেস্টার থেকে বাসায় ফেরার সময় ট্রেনে থাকাকালীন হঠাৎই তার মাথায় ম্যাজিক স্কুলে পড়ুয়া একটি ছেলের কাহিনি ভেসে ওঠে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় আমাদের সবার প্রিয় হ্যারি পটার এর কাহিনী। ভাবনা আসা মাত্রই তিনি একটুও সময় নষ্ট না করে বাড়ি ফিরে বিষয়টিকে নিয়ে একটি স্টোরি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু লেখা শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই তাকে বড় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। লেখা শুরু করার কিছুদিন পরেই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ তার মাকে তিনি হারান। এতে তিনি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। মায়ের মৃত্যুতে তার লেখা বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও তিনি লেখালেখি কিন্তু কখনোই বন্ধ করেননি। এরপর কাজের খোঁজে তিনি পর্তুগাল এ যান এবং একজন ইংলিস টিচার হিসাবে নিযুক্ত হন। জব করার পাশাপাশি তিনি স্টরি লেখাটাও চালিয়ে যেতে থাকেন। পর্তুগালে থাকাকালীন একজন পর্তুগিজ জার্নালিস্ট জন এগুয়েয়রের সাথে তার পরিচয় হয় এবং তারা বৈবাহিক সম্পর্কে অবতীর্ণ হন। কিছু সময়ের মধ্যেই তাদের একটি ছোট্ট মেয়ে হয় যার নাম তিনি তার পছন্দের লেখিকার নামে জেসিকা রাখেন। কিন্তু বৈবাহিক জীবনের সুখও বেশিদিন তার জীবনে স্থায়ী হয়নি।

তার হাজবেন্ডের বাজে ব্যবহার তাকে ডিভোর্স চাইতে বাধ্য করে ডিভোর্সের পর তিনি তার ছোট মেয়েটিকে নিয়ে স্কটল্যান্ডে তার দিদির কাছে চলে যান। যার ফলে ছোট্ট মেয়ের সমস্ত দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়ে। একদিকে ডিভোর্সের কষ্ট অন্যদিকে তার কাছে তখন ছিল না কোন জব। তিনি আবার মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন। এমনকি তার মধ্যে বেশ কয়েকবার সুইসাইড করার মানসিকতাও চলে আসে।

অবশেষে কোন উপায় না দেখে নিজের খরচ জোগানোর জন্য তিনি ওয়েলফেয়ার বেনিফিটস এর জন্য এপ্লাই করেন। ওয়েলফেয়ার বেনিফিট ছিল সে সময় ব্রিটিশ গভারমেন্ট এর দ্বারা দারিদ্র এবং সিঙ্গেলদের জন্য আর্থিক সাহায্যের একটি উদ্যোগ। তাই তিনিও সেখানে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। এই মধ্যে "হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন" লেখা কমপ্লিট হয়ে যায়। তারপর এই স্টরি পাবলিশ করতে গিয়ে তাকে আরো বড় বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি ১২টি পাবলিশিং হাউজ থেকে রিজেক্টেড হন ঠিক এমন সময় ব্লুমস বাড়ি নামক একটি পাবলিশিং হাউস এর চেয়ারম্যান তার নিজের ৮ বছরের মেয়েকে হ্যারি পটার এর প্রথম চ্যাপ্টারটি পড়তে দেনন।বাচ্চা মেয়েটির কাহিনীটা এতো পছন্দ হয় যে সে তার বাবার কাছে পুরো বইটা বায়না করে। যার ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্লুমস বাড়ির পাবলিশার হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ফিলোসফার্স স্টোন বইটি পাবলিশ করেন। শুধুমাত্র মেয়ের আবদার রাখতে। বইটি পাবলিশ হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই বইটি সবার বেশ পছন্দের হয়ে ওঠে এবং বইটি চিলড্রেন্স বুক অফ দা ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও আরো বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়। এরপর হ্যারি পটার সিরিজের একের পর এক নোবেল বের হতে থাকে এবং লোকজনের এতটাই পছন্দের হয়ে ওঠে যে হ্যারি পটারের সাতটি নোবেল নিয়ে মোট আটটি মুভি তৈরি হয়। জে কে রাওলিং এর হ্যারি পটার সিরিজ এর শেষ নোবেল "হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস" সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দেয় এবং বেস্ট সেল অল দা টাইম এর শিরোপা পায়। ইউকে এবং ইউএসএতে পাবলিশ হবার সাথে সাথেই প্রথম দিনই বইটি প্রায় ১১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।

১৭ বছর বয়সে কলেজ থেকে রিজেকশন, ২৫ বছর বয়সে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ নিজের মাকে হারানো, ২৮ বছর বয়সে ডিভোর্স - এ সমস্ত বাধা বিপত্তির পরও তিনি যে জিনিসটা তে সবসময় মনোযোগী ছিলেন সেটা হলো তার স্টরি রাইটিং। সব থেকে বড় কথা হলো ১২ টি পাবলিশিং হাউজ থেকে বাজে ভাবে রিজেক্ট হওয়ার পরও তিনি হাল ছেড়ে দেননি, নিজের লেখা প্রতি থেকে সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিলেন আর এটাই তাকে আজ তার স্বপ্নের জীবনের শিখরে পৌঁছে দিতে একান্ত ভাবে সাহায্য করেছে।

সবশেষে ওনার বলা আমার পছন্দের একটি সেরা উক্তি দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই উনি বলেছিলেন, "Happiness can be found even in the darkest of times, if one only remembers to turn on the light."

অর্থাৎ জীবনের অন্ধকারতম দিন গুলোতেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া সম্ভব শুধু যদি আলোটা জ্বালানোর কথা মনে থাকে।

সবশেষে আপনার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ যদি "হ্যারি পটার লেখিকার কষ্ট থেকে সফলতা" ব্লগটি থেকে আপনি নিজে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ব্লগটি আপনার বন্ধু এবং বান্ধবী দের সাথে শেয়ার করুন যাতে আপনার বন্ধু-বান্ধবীরাও অনুপ্রাণিত হতে পারে।

ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.